নিজস্ব প্রতিবেদক। ১১ জানু ২০২৫ ০৪:৪৬ পি.এম
বাংলাদেশর স্বাধীনতা যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ লোকের হত্যা ও বাস্তবতা।
১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী সামরিক জান্তার আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করার মধ্য দিয়ে পৃথিবীর বুকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক নতুন একটি রাষ্ট্রের জন্ম হলো। একটি লাল সবুজের পতাকা পৃথিবীর মানচিত্রে পতপত করে উড়তে শুরু করলো। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয়। একজন সুনাগরিক হিসেবে সকল মানুষের কাছে তাঁর মা মাটি ও মায়ের ভাষা অত্যন্ত প্রিয়। যাকে অস্বীকার করলে নিজেকেই অস্বীকার করা হয়। পৃথিবীর সকল দেশই কারোনা কারো থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছে। প্রত্যেকটি দেশে দলমত নির্বিশেষে স্বাধীনতাকে পালন করে থাকে হৃদয়ের সবটুকু আবেগ দিয়ে। পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশই একমাত্র স্বাধীন দেশ, যে দেশের স্বাধীনতার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছিলো। ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান বিভক্তির মধ্য দিয়ে দুটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হলো। শুধুমাত্র মুসলিম দুটি অধ্যুষিত অঞ্চল পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিলো পাকিস্তান। দুই অঞ্চলের মধ্যে হাজার মাইল ব্যবধানের কারণে কৃষ্টি, কালচার, রীতিনীতিতে ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ক্রমান্বয়ে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানীরা নিজেদেরকে প্রভু ভাবতে শুরু করলেন। এর ফলে বিভিন্ন বৈপরীত্য পরিলক্ষিত হয়। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হলেও তার পূর্ণ পায় ১৯৭১ সালের ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ফলে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে যে বর্বরোচিত হত্যাকান্ড চালিয়েছিলো তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধেও এতো লোক হত্যা করা হয়নি। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে ৩০ লাখের অধিক লোককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জত লুন্ঠন করা হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী থেকে এই হত্যাকান্ড বিভিন্ন জনে বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করছে। কেউ কেউ দাবি করছেন কোন মতেই এই হত্যাকান্ড ৩০ লক্ষ নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভুলক্রমে ৩ লাখের স্থলে ৩ মিলিয়ন বলেছেন। অন্যদিকে একদল নিরপেক্ষ গবেষক এই সংখ্যা নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ গবেষণার দাবি তুলেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির রাজনীতিবিদরা নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে যত না সংশয় প্রকাশ করছেন, তার চাইতে বেশি সংশয় প্রকাশ করছেন এই ত্রিশ লাখ সংখ্যাটি নিয়ে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীতো দেশ, জাতি এবং গুরুত্বপূর্ণভাবে চট্টগ্রামবাসীর কাছে মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছে হিসেবে ত্রিশ লাখ শহীদের ডেথ সার্টিফিকেটগুলো দেখতে চেয়েছিলেন। আর হাজার মাইল দূরের পাকিস্তান রাষ্ট্রটি হত্যা ত্রিশ লাখ শহিদ তো দূরের কথা, একজনও শহীদ হয় নাই বলে ফতোয়া দিয়ে বসে আছে। বলাবাহুল্য যে, গত ৫ আগস্ট কোটা আন্দোলনের নামে গণঅভ্যুত্থানের ফলে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের ফলে দীর্ঘ একটানা ১৭ বছরের আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশছেড়ে ভারতে অবস্থান করছেন থেকে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দাবিদাওয়া তুলছে, যেগুলো অত্যন্ত দুখজনক। ৫ আগস্টের পর যেসব বিষয় নিয়ে কথা উঠেছে সেগুলো হলো, জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধে জামাতের সম্পৃক্ততা, কেউ কেউ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামকে নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন, কেউ বলছেন, পাকিস্তান আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র, ওরা আমাদের ভাই, ৭১ সালের স্বাধীনতা ওদের মধ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিলো এসব কারণে পুরো দেশের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটি প্রশ্ন উঠেছে ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ লোক শহিদ হয়নি ওটা ৩ লক্ষ ছিলো, শেখ মুজিবুর রহমান ভুল করে ৩ স্থলে ৩০ লক্ষ বলেছেন।
একটি দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে কত লোককে হত্যা করা হলো স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও তানিয়ে বাকবিতন্ডায় জড়ানো কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আজকের লেখার প্রধান কারণ হলো সেই ত্রিশ লক্ষ বিষয়ের যথাযথ যুক্তিতর্ক উপস্থাপনা করা। আসুন আমরা সকলে মিলে ত্রিশ লাখ শহীদের হিসেবটা মিলিয়ে নেই। যারা হিসাবটি মেলাতে পারেন না তাদের প্রধান তিনটি পর্যায়ে যুক্তি হলো: (১) ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে ত্রিশ লাখ বাঙালি শহীদ হন নাই; (২) ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযদ্ধের সময় বাংলাদেশে ত্রিশ লাখ বাঙালি শহীদ হতে পারেন না; এবং (৩) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারিতে ভাষণ দেবার সময় শহীদের সংখ্যা ভুলবশত অতিরঞ্জিত করে ত্রিশ লাখ বলে ফেলেছেন।
প্রথম যুক্তির ব্যাখ্যা:
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযদ্ধের সময় বাংলাদেশে ত্রিশ লাখ শহীদ হয়নি বলে যারা দাবি করেন তাদের জ্ঞানের অজ্ঞতা দেখে যে কেউ লজ্জা পাবেন। কারণ: (ক) ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের লক্ষ্যই ছিল ত্রিশ লাখ বাঙালিকে হত্যা করা।
পাকিস্তানি আর্মিদের এক বৈঠকে ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন, “Kill 3 million of them and the rest will eat out of our hands.” এখানে সুস্পষ্ট যে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রথম থেকেই লক্ষ্য ছিল অন্তত ত্রিশ লাখ বাঙালিকে হত্যা করা। [তথ্যসূত্র : (১) Robert Payne, Massacre: The Tragedy of Bangladesh and the Phenomenon of Mass Slaughter Throughout History (1972), পৃষ্ঠা-৫০;] (২) Debashish Roy Chowdhury, ‘Indians are Bastard Any way’, The Asia Times, 23 June, 2005]
(খ) পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বিষয়ক ওয়েবসাইট defence.pk-এ প্রকাশিত “The Radical Truth: Teaching MPACUK the Forgotten Chapter of Pakistan’s History” শীর্ষক নিবন্ধের তৃতীয় অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “In 1971, over 9 months, President Yahiya Khan and his military commanders with the aid of local collaborators committed mass atrocities on unarmed civilians, killed an estimated three million people...”
(গ) ১৯৭১ সালের ২১ শে ডিসেম্বর দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, “হানাদার দুশমন বাহিনী বাংলাদেশে প্রায় ত্রিশ লাখ নিরীহ লোক ও দু’শতাধিক বুদ্ধিজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে”।
(ঘ) ১৯৭২ সালের ৫ই জানুয়ারি ঢাকার পত্রিকা The Daily Observer -এর শিরোনাম ছিল “Pak Army Killed Over 30 Lakh People”। একই দিন The Morning News এর শিরোনাম ছিল “Over 30 Lakh Killed by Pak Force”।
(ঙ) রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘প্রাভদা’ পত্রিকা ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসেই বাংলাদেশে ত্রিশ লাখ শহীদের বিষয়টি তাদের পত্রিকায় প্রকাশ করেছিল। এই প্রাভদা পত্রিকাটির ইংরেজি সংস্করণে উল্লেখ করা হয়েছিল, Over 30 lakh persons were killed throughout Bangladesh by the Pakisthani occupation forces during the last nine months”। প্রাভদা পত্রিকাটির ১৯৭২ সালের ৫ জানুয়ারির বাংলা সংস্করণে শিরোনাম হয় দখলদার বাহিনী বাংলাদেশে ত্রিশ লক্ষাধিক মানুষ হত্যা করেছে”।
(চ) ১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারি দৈনিক বাংলা’র “হুঁশিয়ার আন্তর্জাতিক চক্রান্ত” শিরোনাম খবরে লেখা হয় দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশে যে তাণ্ডব চালিয়েছে তাতে ৩৫ লক্ষাধিক বাঙালি প্রাণ হারিয়েছে।
(ছ) গবেষক রওনাক জাহানও তার গবেষণায় ত্রিশ লাখ শহীদের সংখ্যা খুঁজে পেয়েছেন। [তথ্যসূত্র: “Genocide in Bangladesh” in Samuel Totten, William S. Parsons and Israel W. Charny (ed), Century of Genocide: Critical Essays and Eyewitness Accounts (2nd ed, Routledge, 1995) পৃষ্ঠা-২৯৫। ]
দ্বিতীয় যুক্তির ব্যাখ্য :
যারা মনে করেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিশ লাখ মানুষ শহীদ হওয়া কোনো মতেই সম্ভব না, তারা আসলে অঙ্কে বড় কাঁচা। সহজ-সরল অঙ্কের ফর্মুলা না বোঝার কারণেই তাদের এই বাচালতা। কারণ,
(ক) Rudolph Joseph Rummel গণহত্যার পরিসংখ্যান কিভাবে করতে হয় তার একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। পদ্ধতিটি তাঁর রচিত “Estimating Democide: Methods and Procedures” শীর্ষক নিবন্ধে বিধৃত হয়েছে। তাঁর রচিত Statistics of Democide (1998) গ্রন্থের অষ্টম অধ্যায়ে তিনি অন্তর্ভুক্ত করেছেন “Statistics of Pakistan Democide, Estimates Calculation and sources” শীর্ষক নিবন্ধটি। এই নিবন্ধে Rummel তাঁর আবিষ্কৃত গণহত্যা পরিসংখ্যান পদ্ধতি অনুসারে দেখিয়েছেন যে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে ৩০ লাখ ৩ হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছেন।
(খ) ১৯৮১ সালের UNHRC (ইউনাইটেড ন্যাশনস হিউম্যান রাইটস কমিশন) রিপোর্ট অনুযায়ী মানব সভ্যতার ইতিহাসে যতগুলো গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তার মধ্যে অল্প সময়ের মধ্যে সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে।
প্রতিদিন গড়ে ৬ হাজার থেকে ১২ হাজার মানুষ তখন খুন হয়েছিল বাংলাদেশে। গণহত্যার ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ গড় হিসাব। উল্লেখ্য, অপারেশন সার্চলাইটের প্রথম রাতের প্রাণহানির সংখ্যাই ছিল কমপক্ষে ৩৫ হাজার। চুকনগর গণহত্যায় প্রাণহানি ঘটেছিল ১০ হাজারেরও বেশি। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চে প্রকাশিত New York Times এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২৭ মার্চে প্রাণহানির সংখ্যা ১০ হাজার। ১৯৭১ সালের Sydney Moning Herald এর রিপোর্ট অনুযায়ী মার্চের ২৫ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত (৫ দিনে) প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় ১ লাখ। এতে দেখা যায়, প্রতিদিন প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। সুতরাং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে প্রাণহানির দৈনিক গড় UNHRC রিপোর্টের ঊর্ধ্বসীমার কাছাকাছি (প্রতিদিন ১২ হাজার) বলেই আমরা ধরে নিতে পারি।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলেছে মোট ২৬৭ দিন (২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর)। অতএব, দিনপ্রতি ১২ হাজার নিহত সংখ্যাকে ২৬৭ দিন দিয়ে গুণ করলে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩২ লাখ ৪ হাজার। আবার UNHRC এর নির্দেশিত ঊর্ধ্বসীমা ১২ হাজার ও নিম্নসীমা ৬ হাজারের গড় যদি হয় ৯ হাজার, তবে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় অন্ততঃ ২৪ লাখ ৩ হাজার।
(গ) ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি বাংলাদেশে প্রায় ৯৪২টি বধ্যভূমি শনাক্ত করেছিল। অতি সম্প্রতি, ১৯৭১ গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের সমীক্ষা অনুযায়ী ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে মোট ৩ হাজার ৪০০টি বধ্যভূমি শনাক্ত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম পাহাড়তলী বধ্যভূমি স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের হিসাব অনুযায়ী ১৯৭১ এর ত্রপ্রিল থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে প্রায় ২০ হাজারের মতো বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছে। আবার ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের গবেষণা অনুযায়ী গল্লামারী বধ্যভূমিতে ১৫ হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছে। রায়ের বাজার বধ্যভূমি ও জল্লাদখানা বধ্যভূমির মোট লাশের সংখ্যা নির্ণয় করা বেশ দুষ্কর।
তবে যদি ত্রিশ লাখ বাঙালিকে শুধু ৩ হাজার ৪০০ বধ্যভূমিতেই হত্যা করা হয় তবে প্রতি বধ্যভূমিতেই অন্তত ৮৮২ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রাপ্ত তথ্যের চেয়ে অস্বাভাবিকভাবে কম। সুতরাং ত্রিশ লাখ শহীদের সংখ্যার সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অর্থহীন। একই সাথে এটাও মনে রাখতে হবে যে, অসংখ্য লাশকে নদীতে বা পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই শুধুমাত্র বধ্যভূমির সংখ্যা দিয়ে একাত্তরের শহীদের মোট সংখ্যা নিরূপণ করা একেবারেই হবে না। প্রকৃত শহীদের সংখ্যা ত্রিশ লাখের বেশিই হবে।
(ঘ) ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে। এটাও সত্য যে, যুদ্ধে অনেক পাকিস্তানি সেনার মৃত্যুও ঘটেছে। ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার পর তদন্ত সংস্থা এলাকাভিত্তিক রাজাকার বাহিনীর নাম সংগ্রহের কাজ শুরু করে। এছাড়া মেজর আরেফিন এবং মুনতাসীর মামুনও আলাদাভাবে রাজাকারদের তালিকা তৈরি করার কাজ করেছেন।
সকলের তথ্য অনুযায়ী ১৯৭১ সালে রাজাকারের সংখ্যা ৪৭ হাজার থেকে ৬০ হাজার ছিল। এরা সকলেই পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাঙালি নিধন করেছে একাত্তরে। যদি ধরে নেই, অন্তত ৪৭ হাজার রাজাকার সেই সময় ৯৩ হাজার পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে ছিল, তবে মোট ঘাতকের সংখ্যা দাড়ায় ১ লাখ ৪০ হাজার। এখন ১ লাখ ৪০ হাজার ঘাতক যদি ত্রিশ লাখ বাঙালিকে নিধন করে থাকে তবে এক একজন ঘাতক মোট ২৬৭ দিনে মাত্র ২১ জনকে হত্যা করেছে। অর্থ্যাৎ একজন ঘাতক মুক্তিযুদ্ধকালে ১৩ দিন পর পর একজন বাঙালিকে হত্যা করেছে। এই সংখ্যাটি কি অবিশ্বাস্য?
ত্রিশ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে যারা সংশয় প্রকাশ করেন, অঙ্কটি বেশ কয়েকবার কষে দেখবেন হিসেবটি ঠিক করে বুঝবার জন্য।
তৃতীয় যুক্তির ব্যাখ্যা:
যারা দাবি করেন যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারিতে ভাষণ দেওয়ার সময় ভুলবশত শহীদের সংখ্যা অতিরঞ্জিত করে ত্রিশ লাখ বলে ফেলেছেন, তারা যে কত হাস্যকর মিথ্যাচার করতে পারেন তা ভেবে আমি অবাক হই। কারণ, (ক) ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত “চরমপত্র” অনুষ্ঠানটিতে এম আর আখতার মুকুল ত্রিশ লাখ শহীদের কথা উল্লেখ করেছেন।
(খ) ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর প্রকাশিত দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে, ১৯৭২ সালের ৫ জানুয়ারিতে প্রকাশিত The Daily Observer, The Morning News এবং রাশিয়ার প্রাভদা পত্রিকার বাংলা সংস্করণের শিরোনামে এবং ১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারিতে প্রকাশিত দৈনিক বাংলার শিরোনামে ত্রিশ লাখ শহীদের কথা উল্লেখ করা হয়।
অতএব, দেখা যাচ্ছে যে, বঙ্গবন্ধুর ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারিতে ভাষণ দেওয়ার অনেক আগে থেকেই ত্রিশ লাখ শহীদের বিষয়টি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অনুযায়ী একটি স্বীকৃত বাস্তবতায় পরিণত হয়ে গিয়েছিল। তাই ত্রিশ লাখ শহীদ নিয়ে বঙ্গবন্ধু অতিরঞ্জিত করে কিছু বলেছেন তা কখনই হতে পারে না। তিনি সত্য ও বাস্তব কথাই বলেছেন। সুতরাং এ বিষয়টি নিয়ে বাকবিতন্ডায় করা নিজেদের অস্তিত্বকে বিলীন করে দেয়ার সমান।
সর্বশেষে বলতে চাই, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ লোককে সেদিন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী হত্যা করেছিলো এটা কোন ভুলে মুখ থেকে ফসকে যাওয়া কথা নয়। এটা বাস্তব সত্যকথা। এটাকে অস্বীকার করা ও বিভ্রান্তি ছড়ানো নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করার সমতুল্য। আজ যারা ত্রিশ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা আসলে নিজেরাই বিভ্রান্ত। খোঁজ নিয়ে দেখলেই জানা যাবে যে, যারা ত্রিশ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ান বা এর বস্তুনিষ্ঠ গবেষণার দাবি করেন তাদের সকলেরই পাকিস্তানি সম্পৃক্ততা রয়েছে হয় পারিবারিকভাবে, নয় রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিকভাবে। বাংলাদেশে বসবাসকারী এসব পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী লোকজন কখনই আপনার বা আমার বন্ধু হতে পারে না। আসুন, আমরা এই সব বিভ্রান্তি ভুলে নিজেদের অস্তিত্বকে রক্ষার জন্য সকল বিভ্রান্তি ভুলে বাস্তবতাকে মেনে নেই।
মো. জাহিদুর রহমান- লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট।
বাংলাদেশ মনিপুরী মুসলিম এডুকেশন ট্রাস্ট আয়োজনে মেধাবৃত্তি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
কমলগঞ্জে তারুণ্যের আলো আয়োজনে মেধা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত।
মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড ও মাসিক কল্যাণ সভা অনুষ্ঠিত
মৌলভীবাজারের ঐতিহ্যবাহী শেরপুরে মাছের মেলায় আড়াই লক্ষ টাকার বাঘাইড় মাছ
কমলগঞ্জে পরকীয়ার জের ধরে স্ত্রীকে হ-ত্যা করল স্বামী
সাংবাদিক সমিতি কমলগঞ্জ ইউনিটের উদ্যোগে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ।
বাংলাদেশর স্বাধীনতা যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ লোকের হত্যা ও বাস্তবতা।
শ্রীমঙ্গলে শহর যানজট মুক্ত রাখতে পৌর প্রশাসনের অভিযানে দুই হাজার টাকা জরিমানা
কোরআন তেলাওয়াত মানসিক শক্তি বাড়ায়।
শ্রীমঙ্গলের রামনগরে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে খেলাধূলা ও পুরস্কার বিতরণী।
শ্রীমঙ্গলে দলবেঁধে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী এক নিরীহ পরিবারে হামলার অভিযোগ!
সিলেটে আবাসিক হোটেলে পুলিশের জালে চার নারী
এবার দেশে আলু-পেঁয়াজের বাজারেও স্বস্তি।
শীতবস্ত্র কোন প্রকার দয়া নয়, তারেক রহমানের উপহার' শ্রীমঙ্গলে- মহসিন মিয়া মধু
নিসচা কমলগঞ্জ শাখার পক্ষ থেকে বিদায়ী ইউএনও জয়নাল আবেদীনকে সম্মাননা স্মারক প্রদান।
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। যা সারাদেশের মধ্যে সর্বনিম্ন।
শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার-২
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় চাঞ্চল্যকর রূপালী ব্যাংক ডাকাতি ও জিম্মির ঘটনায় ১৮ লক্ষ টাকাসহ ৩ জন ডাকাতের যৌথবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ।
শ্রীমঙ্গলে চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে সেলফি, প্রাণ হারালো এসএসসি পরীক্ষার্থীর
শ্রীমঙ্গলে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শীতার্তদের মাঝে মহসিন মিয়া মধু'র শীতবস্ত্র বিতরণ
পুলিশের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের সম্মাননা।
মহান বিজয় দিবসে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
শ্রীমঙ্গলে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হয়েছে ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস-২০২৪
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশ বাসিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সাকসেস হিউম্যান রাইটস সোসাইটি'র চেয়ারম্যান মোঃ সোবাহান বেপারী।
মৌলভীবাজার জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) বিশেষ অভিযানে ১০৪ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ এক নারীকে আটক করা হয়েছে।
মুফতি গিয়াস উদ্দিন তাহেরীর বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার তিন
রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
লা নিনা’র প্রভাবে সারাদেশে বৈরী আবহাওয়ার আভাস।
মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের আয়োজনে সাইবার ক্রাইম তদন্ত বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কনকনে শীতে কাঁপছে মৌলভীবাজার তাপমাত্রা ১১.৯ ডিগ্রী।